“লেটারবক্স”
(১)
‘ও বউ। কিগো কথা কানে যাচ্ছে? কখন থেকে ডাকছি। বলি কার সোহাগে সারাদুপুর মুখ ঝুলিয়ে বারান্দার বসে থাকো বলোতো? মান-সম্মান কি সব ধুলোয় মিশিয়ে দেবে নাকি? বাপ মা কি কিছুই শেখায়নি? গেরস্থ ঘরের মেয়ে-বউদের তো কখনও এমনতরো ব্যবহার করতে দেখিনি।‘
‘তোমার কি কিছু লাগবে ঠাম্মা?’
‘আ মলো যা। মাথা খা। আমার আবার কি লাগবে? তোমার বেহায়াপনা দেখে গা জ্বলে যায়। পাতকোতলায় গেছিলাম সুপারি কুড়োতে। দেখলাম তুমি হাঁ করে রাস্তার দিকে চেয়ে আছ। চোখের একেবারে পলক পড়ছে না। চলে এলাম। মাঝে মাঝেই দেখছি আমার নাতিটা চলে গেলেই ফাঁকা দুপুরে এইখানে এই রাস্তার ধারের বারান্দায় গা এলিয়ে বসে থাকো। কই শ্যামল যখন থাকে তখন তো দেখি না। কি ব্যাপার খুলে বলোতো?’
‘এসব কি বলছ ঠাম্মা? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি এখানে...’
‘কেন ভুল কিছু বলেছে? উনি তো ঠিক কথাই বলেছেন। গা থেকে এখনও নতুনের গন্ধ ছাড়েনি। এখনই এই? তাহলে পরে কি করবে? বলি দুপুরে ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া যায় না? আমাদের এই দোতলা বাড়িতে কি ঘরের অভাব বৌমা? আজ তোমার শ্বশুড়মশাই বেঁচে থাকলে এসব দেখেশুনে কি কষ্টটাই না পেতেন। এই সময়টা সবাই নিজের ঘরেই শোয়। আর তুমি আলুথালু হয়ে এভাবে বারান্দায় বসে বসে... ছি ছি কী লজ্জা... কী লজ্জা...’
লজ্জার কারণটা যে ঠিক কি, কেন সেটা বুঝতে না পারলেও বন্যা বেশ বুঝতে পারছিল আর বেশিক্ষণ এখানে বসা যাবে না। প্রথমে ঠাম্মা, তারপর শাশুড়ি মা এসে যে পরিমাণ অগ্নিবর্ষণ শুরু করেছেন তাতে স্বয়ং ইন্দ্রদেবও তাদের কাছে নিজের ক্ষমতা দেখাতে ভয় পাবেন। আর ওতো মাত্র এক বছরের নতুন বিয়ে করে আনা বৌ।
বন্যা আর কথা না বাড়িয়ে ঘরে ঢুকে আসে। ঘড়িতে সবে দুটো বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। তার মানে এখনও দু’ঘন্টা মতন বাকি।
দু’ঘন্টা বাকি?
কিসের জন্য?
কেন বন্যা ওভাবে অপেক্ষা করে?
এই গল্পটা জানতে গেলে আমাদের বেশ কয়েকবছর পিছিয়ে যেতে হবে।
কলকাতার ৭৮সালের ভয়ঙ্কর বন্যায় জন্ম হয়েছিল ওর। নামটাও তাই। এক মধ্যবিত্ত একান্নবর্তী পরিবারে জেঠা, বাবা, কাকাকে নিয়ে বাস। ঘুম থেকে ওঠা থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্য্যন্ত হাসি, কান্না, ঝগড়া বিবাদ, ফুর্তি ইত্যাদি প্রভৃতি যাবতীয় আলাপচারিতার মধ্যে বড় হয়েছে বন্যা। আর ওর একেবারে নিজের পরিবারটুকু বলতে বাবা, মা আর দাদা।
তখন কত হবে? ওই বারো-তেরো। পড়াশুনায় তেমন মন কোনোদিনই ছিল না বন্যার। কিন্তু আঁকার হাত ছিল বেশ খোলতাই। একবার দাদার স্কুলের একটা প্রাকটিক্যাল খাতায় মনভুলন্ত কিছু একটা এঁকে ফেলেছিল। ব্যাস। দাদার স্কুলের সবাই ভেবেছিল, এ আঁকা বুঝি বিতানের। আর যায় কে? বিতান বন্যাকে দিয়ে লাগাতার কারণে অকারণে ছবি আঁকানো শুরু করে। বন্যা আঁকে বটে। তবে লাভের মুড়ো লেজা সবটাই বিতান একাই ভোগ করে। বিতানের দেখাদেখি জেঠার দুই ছেলে বঙ্কু, পিন্টু ওরাও চলে আসে। টুকটাক নিজেদের কার্যসিদ্ধিও করে নেয়। নাঃ এসবে বন্যার তেমন কোনও দুঃখ ছিল না। ছিল না মনের কোণে কোনও আক্ষেপ।
সে ওরা লোকের কাছে প্রশংসা পাক। বন্যার তাতে বিন্দুমাত্র হিংসে নেই। কি হয়েছে? ওকে আঁকতেই তো বলেছে। সত্যি কথা বলতে এরকম আঁকা যদি ঘন্টার পর ঘন্টা চালিয়ে যেতে হয় তাতেও ওর বিশেষ অজর আপত্তি নেই। খারাপলাগা, কষ্ট পাওয়ার শুরুর গল্পটা অন্যখান থেকে। যেটা হয়ত মোটা দাগে না বললে অনেকেই ইগনোর করে যাবেন।
তাই একটু দেগে দিয়ে বলি।
বন্যার বাবা একদিন হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি এসে ওর হাতে ধরিয়ে দেন কাঠের মিস্ত্রি দিয়ে তৈরি করা একখানা নতুন লেটারবক্স। বলেন,
‘একটু রং করে দে দিকিনি। রাতে শুকিয়ে যাবে। সকালে টাঙিয়ে দেব।‘
‘আচ্ছা বাবা।‘
বলে মাথা নাড়িয়ে বন্যা বসে রং করতে। এ কাজ তার বড় পছন্দের। আঁকা, রং এসব হলে যে ওর আর কিচ্ছুটি চাই না।
কাঠের বাক্সটার গায়ে মন দিয়ে বেশ চকচকে রং করে বাবার কাছে আসে বন্যা। হেমন্তবাবু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখেন। তাঁর মুখ দেখে মনে হয়েছিল, মেয়ের এ কাজে বেশ খুশিই হয়েছেন। তারপর বন্যা যখন নিজের ঘরের দিকে ফিরতে উদ্যোগ করছে। ওকে ডেকে বলে ওঠেন,
‘ওমা চললি কোথায়? দাঁড়া কাজ তো এখনও শেষ হয়নি। শুধু যে রং হল। এটা এখন তোর কাছেই রাখ। একটু শুকালে আমার কাছে নিয়ে আসিস। রাতে আমি বলে বলে দেব। এরওপর তুলি দিয়ে নাম লিখতে হবে যে।‘
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর হেমন্তবাবু গুছিয়ে বসে নামের বানান বলে বলে দেন বন্যাকে। বন্যাও বেশ খুশি খুশি ছিল। একে তো এমন একটা জিনিসে তার হাতের কাজ থাকছে। যেটাকে ডিঙিয়ে তবেই বাড়িতে ঢুকতে হয়। তাই আসা যাওয়ার পথে সকলের নজরও পড়বে। চাপা একটা খুশি খুশি গর্ব বুরবুরি কাটছিল কিশোরীমনে। আর বাবা যে ওর হাতের লেখাকেও এতটা প্রাধান্য দিয়ে রঙের ওপর লিখতে বলবেন সেটা ভাবতেই পারেনি। আসলে পড়াশুনা, লেখাজোখার কাজটা তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দাদা-ই সারে।
বাড়িটা ওদের তিনতলা। প্রতি তলাতেই একটা করে পরিবার। আর প্রতি পরিবারের একটা করে লেটারবক্স। ওদের আগের বক্সটা ছোটখাটো ছিল। চিঠিপত্র প্রায়ই ভিজে যেত। মুচড়ে যেত। নষ্ট হত। তাই তড়িঘড়ি এই ব্যবস্থা। কিন্তু কাজটা শুরুর দিকে যতটা আনন্দ আর গর্বের ছিল, শেষ হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে ততটাই কষ্ট ও যন্ত্রণার হয়ে ওঠে। বন্যার গলা বুজে আসছিল। বুকের ভেতরটা তোলপাড় করছিল চাপা তুফানে।
তাহলে কি বন্যা যা ভাবছে সেটাই সত্যি? কেন? কেন?
কে দেবে এর উত্তর?
খুব নিচু স্বরে শেষবারের মত বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিল,
‘হয়ে গেছে বাবা?’
লেটারবক্সটা ধরে ডানহাতটাকে খানিক টান টান করে ভদ্রলোক বলেছিলেন,
‘হ্যাঁ একদম। কমপ্লিট। খাসা কাজ হয়েছে বুঝলি বন্যা।‘
(২)
‘খাসা কাজ করো তো তুমি? মা আজকে ড্রয়িংরুমে খেতে বসে বলছিল, ঠাম্মুও খুব রেগে আছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাকি কিসব...
‘আমার কি নিজের জীবন বলে কিছু নেই? থাকতে পারে না? কোথায় যাব কি করব সব তোমাদের বলে করতে হবে? তাছাড়া আমিতো বাড়ি থেকে বাইরে কোথাও যাচ্ছি না। তবে?’
‘হুম বেশ বুলি আওড়াতে শিখেছ দেখছি। তোমার নিজের করে অনেক কিছু থাকতেই পারে। নিশ্চয়ই পারে। কিন্তু তাই বলে রোজ দুপুরে বারান্দায়... ব্যাপারটা কেমন একটা ইয়ে ইয়ে হয়ে যাচ্ছে না?’
‘ওগুলো তোমাদের মনের পাপ...
‘পাপ? তাই বুঝি? পাপ যে কার মনে সেকি বুঝতে বাকি আছে? আমার বাড়িতে... আমারই পিঠ পিছে... তোমার লজ্জা শরম কি একেবারে চুলোয় চলে গেছে? শোনো এপাড়ায় ছোট থেকে বড় হয়েছি। সব খবরই রাখি। উল্টোদিকের ফ্ল্যাটে যে মেরিনের ছেলেটা ভাড়া এসেছে...। কি ভাবছ? আমি বোকা পাঁঠা? কিচ্ছু বুঝি না?’
‘শ্যামল... তুমি এসব...
‘গলা তুলে কথা বলো না। তোমার মুখে আর ওই নাম সাজে না... চুপ করো...
চুপ করে যায় বন্যা।
কারণ ও জানে শ্যামলের এই অভিযোগের পর কথা বাড়ানোর আর কোনও মানেই নেই। সম্পর্কের ভিতটা কোনোদিনই তেমন জোরদার ছিল না। কিন্তু সন্দেহের ঘুণটা একবার যদি সেই নড়বড়ে ভিতে ঢুকে পড়ে। তবে...তবে...
এখন রাত বারোটা। কিছুতেই ঘুম আসছে না। অপেক্ষা করতে হবে আরও দশ-বারো ঘন্টা।
হ্যাঁ প্রতিদিন বন্যাকে অপেক্ষা করতে হবে।
অপেক্ষা করতে হবে এমন একটা দিনের জন্য।
যে দিনটার পরে আর কোনও অপেক্ষা থাকবে না।
আচ্ছা সত্যি সত্যি এমন দিন কি কোনওদিন আসবে?
(৩)
‘বৌমা, যাও যাও তোমার বাবা-মাকে আরও দুটো রসগোল্লা দিয়ে এসো। আহা। দাঁড়িয়ে রইলে কেন? গরম গরম দোকান থেকে নিয়ে এসেছে শ্যামল। যাও... যাও...’
‘ও শ্যামলের মা... সত্যি নাকি? কি গো? ১০কাঠা জমির ওপর দোতলা বাড়ি? শুধু মিষ্টি দিচ্ছ? একটু লুচি ভাজতেও তো পারতে...
‘হ্যাঁ হ্যাঁ .... তাই করছি। আগে একটু মিষ্টিমুখ করুক। এত ভাল একটা খবর। আমাদের শ্যামলের কপাল বলো। তা নাহলে এরকমটা হয়? ছেলেটা আমার খুব পয়া। পেটে থাকতেই বেশ বুঝেছিলাম। তোমার ছেলেই তো শ্যামল পেটে আসতেই ভিক্টর স্যারের পাশে বসার সুযোগ পেল। কেরানিগিরিতে উন্নতি করা কি এতই সোজা? সব হয়েছে শ্যামলের জন্য।
শাশুড়ির কথা শুনতে শুনতে কান মাথা প্রায় গরম হয়ে আসছিল।
কেন এল ওরা?
কেন আরও নরক বানিয়ে তুলল ওর জীবনটা?
হাতের চা আর মিষ্টির প্লেটটা টেবিলের ওপর রেখে চাপা গলায় বন্যা বলে,
‘তোমরা তো আমাকে ফোনেই বলতে পারতে এসব। এই সামান্য ব্যাপারে এক্ষুণি এখানে আসার কি ছিল? আমার একদম ভাল্লাগছে না।‘
‘তুই যেন কি বন্যা। জেঠু তোকে কত ভালোবেসে এসব দিয়ে গেল। তাছাড়া সইসাবুদের তো একটা ব্যাপার আছে। আমি রমেনবাবুকে কথা দিয়ে এসেছি। আজই ওনার চেম্বারে গিয়ে গোটা ব্যাপারটা মিটিয়ে আসব। টাকাটা হাতেই দেবেন। ঠাকুর মুখ তুলে চেয়েছেন। এসব কাজ বেশিদিন ফেলে রাখা যায় না। বুঝলি?’
‘আমার বুঝতে বয়েই গেছে। আমার যাওয়ারও কোনও দরকার নেই। তোমরা দাদাকে নিয়ে চলে যাও।‘
‘সেকি বৌমা! এ তোমার কেমন কথা? তোমার দাদা যাবেন কেন? তোমাকেই তো যেতে হবে। আমি শ্যামলকে বলে দিয়েছি। ও যাবে তোমার সঙ্গে।‘ বন্যাকে থামিয়ে দিয়ে বলে ওঠে ওর শাশুড়ি।
কী লোভী হলে মানুষ এমন কথা বলতে পারে! বন্যা ওদের দেখছিল আর অবাক হচ্ছিল। কি বলবে এদের?
ওর বাবার কোন লতায় পাতায় দূরসম্পর্কের দাদা। হরিজেঠু। জ্ঞানত তাঁকে কোনওদিন চোখেও দেখেনি বন্যা। পুরুলিয়ার কোন গ্রামে থাকতেন। মারা গেছেন সদ্য একমাস হল। এতদিনে হটাৎ করে জানাজানি হয়েছে। তিনি গ্রামের গোটা সম্পত্তি দোতলা পাকা বাড়ি সবটাই বন্যার নামে লিখে গেছেন। উনি নাকি খুব ভালোবাসতেন বন্যাকে। পায়ের সমস্যার কারণে কলকাতা যাতায়াত করতে পারতেন না। ভদ্রলোক অবিবাহিত ছিলেন। নিজের চারধারেও আপনার জন বলতে কেউই ছিল না। সেক্ষেত্রে সম্পত্তি বিলিয়ে দিয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। তাই বলে বন্যা? আর ওর বাবা-মাও তেমনই। বাড়ি, জমি, টাকা এসব শুনেটুনে সোজা বন্যার শ্বশুরবাড়ি চলে এসেছেন। উদ্দেশ্য একটাই, ভদ্রলোক মারা যাওয়ার সময় সম্পত্তির সঙ্গে সঙ্গে কিছু ক্যাশ টাকাও রেখে গেছেন। উকিলকে বলা ছিল। তিনি সম্পত্তির মালিক মারা যাওয়ার কয়েকদিন বাদেই বন্যার বাবার টেলিফোন নাম্বার জোগাড় করে ফোন করেছেন। মেয়েকে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কলকাতায় তাঁর নিজস্ব চেম্বারে দেখা করতে বলেছেন। হেমন্তবাবুও কম যান না। ওই থোক টাকাটা বন্যাকে দিয়ে তুলিয়ে ছেলের ব্যবসায় লাগানোর সুপ্ত ইচ্ছে। মুখে সরাসরি না বললেও বন্যা সেকথা বেশ বুঝেছে। আর তাইতেই...
ও যায় তো কোথায় যায়?
‘ওমা বৌমা। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। শুভ কাজে দেরি করতে নেই। শ্যামল তৈরিই আছে...তোমার সঙ্গে যাবে তো...
সত্যি সত্যি বন্যাকে যেতে হবে?
কেন যাবে ও?
কিসের জন্য?
ওর কিচ্ছু লাগবে না।
যে মানুষগুলো নিত্যদিন অকথা কুকথা বলে ওকে বারবার টেনে নামিয়ে দিচ্ছে নরকে। এক চুটকিতে তাঁরা গিরগিটির মত রং বদলে ফেলল?
বন্যার সঙ্গে কি মিষ্টি করে কথা বলছে! কোন ফাঁকে শ্যামলকেও ফোন করে দিয়েছিল অফিসে। সেও বাড়ি ফিরে এসেছে গন্ধে গন্ধে।
উফঃ আর সহ্য করতে পারছে না।
শ্যামলের সম্পত্তি? ওর কপালেই সব হয়েছে?
‘কি গো শুনছ কে রিতা না কী নাম বলল তোমাকে ফোন করেছে? ফোনটা ধরো।‘
নিজের শোওয়ার ঘরে পা দিতেই শ্যামল এসে দুটো কথা বলেই চলে যায়।
রিতা?
এখন?
বন্যা পা চালিয়ে গিয়ে ল্যান্ডলাইনটা ধরে।
‘হ্যালো!’
‘বন্যা?’
‘হ্যাঁ রে বলছি।‘
‘অ্যাই তুই শুনেছিস? আমি খবরটা পেয়েই তোকে আগে জানাতে ফোন করলাম। জানি তুই রাজি হবি। শোন আমি যা যা বলছি...
রিতা একে একে বলে যাচ্ছিল। বন্যা শুনে যাচ্ছিল। ওর মনে হচ্ছিল দুপুরের তেজিয়াল রোদটা কমে গিয়ে আচমকাই একটা ফুরফুরে মেঘলা ঠান্ডা হাওয়া ওকে ঘিরে ঘুরপাক খাচ্ছে।
তাহলে কি এবার সত্যি সত্যি অপেক্ষার শেষ হতে চলেছে?
কে জানে!
(৪)
‘না সবসময় তুমি যা বলবে আমি মেনে নিতে পারব না। কেন মেনে নেব বলতে পারো শ্যামল? বিয়ের পর থেকে কি দিয়েছ তুমি আমাকে?’
‘কেন কেন পারবে না? ওই গন্ডগ্রামে গিয়ে কি করবে তুমি? ওখানে করারই বা কি আছে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।‘
‘এখন কিছু করার নেই বলে যে ভবিষ্যতেও করার কিছু থাকবে না এমন তো নয়।‘
‘আরে তুইও যেমন বোকা। বুঝতে পারছিস না বৌমা কেন ওটা বিক্রি করতে চাইছে না? রংরলিয়া করবে যে? কোন ভাতারকে কখন জোটাবে তার ঠিক আছে! যখন ওকে দেখতে গেছিলাম এই হাড়গিললে চেহারায় এত খিদে বুঝতেই পারিনি।‘
‘মা... এ কি বলছ? তোমরা আমাকে এমন...
‘ঠিকই বলছি বৌমা। তোমার মতিগতি কি আমি বুঝি না ভেবেছ? আমার শ্যামলকে দিয়ে তোমার পোষায় না। অনেক.. অনেক পুরুষমানুষ চাই তোমার। আমার মাথার চুল কি এমনি এমনি পেকে গেছে?’
‘সত্যি আপনারা কিছুই বোঝেন না। যদি বুঝতে পারতেন তাহলে আজ একথাগুলো আমাকে বলতে পারতেন না। দুনিয়াটা কি আপনাদের মত...‘
‘রাখোতো বন্যা। তোমার ফিলজফি মার্কা কথা রাখো। শেষবারের মত জিজ্ঞাসা করছি। ভাল করে ভেবে বলো। আমি ওদের কথা দিয়ে এসেছি। কথার খেলাপ করতে পারব না। রাই বিল্ডার্স জানো তো ভালর ভাল আবার মন্দের মন্দ। বাড়ির কাগজপত্রগুলো দেখালেই একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।‘
‘তুমি নিজের ইচ্ছেমত কাকে কি কথা দিয়েছ সেটা আমি জানব কিকরে? আমার এখানে করার কিছুই নেই। আর তাছাড়া ব্যবস্থা যা করার আমার জেঠুই করে গেছেন। এ বাড়ি জমি কিছুই বেচা যাবে না। আর আমার অমতে যদি কেউ সেটা করতে আসে। তবে...‘
‘ফুঁ... রাখো তো... ওসব আমি সামলে নেব। কোনও ব্যাপার নয়। শুধু তুমি নাখরা না দেখিয়ে লাইনে এসো তো... একবার যদি সবটা হাতে এসে যায়...’
‘সরো... সরে যাও আমার কাছ থেকে। আমি... আ...মি তোমাদের ঘেন্না করি... তোমরা তলে তলে এতটা শয়তান আমি জানতাম না। অন্যের জিনিসের ওপর এত লোভ তোমাদের? আমার বিয়েতে তো সব নিয়েছ কিছুই বাকি রাখনি। টাকা, গয়না, ফার্নিচার... তাও...’
‘কি বললে? এত বড় কথা...’
‘আমি তো তোমাদের কোনও অসম্মান করিনি, তাহলে তোমরা এভাবে কেন...?’
‘চুপ... চুপ একদম আর কোনও কথা নয়। নাহলে চিরদিনের মত চুপ করিয়ে দেব। তখন বুঝতে পারবি কত ধানে কত চাল?’
শ্যামল চিৎকার করে এসে বন্যার গায়ে হাত তুলতে যাবে আচমকা ‘মাগো...’ বলে ভয়ানক কেঁদে উঠে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে বন্যা। কোন অজানা আতঙ্কে নারী শরীরটা থরথরিয়ে সামান্য কেঁপে উঠেই স্থির হয়ে যায়।
বন্যা সম্পূর্ণভাবে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাওয়াতে থতমত খেয়ে যায় ওরা।
কিছুই বুঝতে না পেরে শ্যামল বসে ঝুঁকে পড়ে বন্যার মুখের ওপর। গায়ে হাত দিয়ে ডাকে। বন্যার কোনও সাড়া পায় না। হল কি?
রাগের মাথায় অনেক কথা বললেও এখন বন্যার ভালমন্দ একটা কিছু হলে... তখন তো শ্যামলকেই...
শ্যামলের মা... ঠাকুমা... জল নিয়ে এসে ছিটতে থাকে...
ডাক্তার ডাকবে কি?
(৫)
‘শোনো বৌমা, ডাক্তার যাই বলুক আমি কিন্তু এই সময়টায় বাপের বাড়িই ছিলাম। আমার যাবতীয় খরচা বাবা দিয়েছিল, নার্সিংহোমের খরচটা পর্যন্ত।‘
‘কিন্তু মা... ডাক্তার বললেন প্রথম তিনমাস খুব সাবধানে থাকতে এই সময় জার্নি করাটা...
‘কী এমন জার্নি বাপু। এক দু’ঘন্টায় জার্নি করে বাপের বাড়ি গিয়ে উঠবে। আমার হাই-প্রেশার। সুগার। আমি এই ঝক্কি পোহাতে পারব না।
ঝক্কি যে শ্যামলের বাড়ির লোক কেউই পোহাবে না জানত বন্যা। অজানা ছিল শুধু এই খবরটা। হ্যাঁ বন্যা প্রেগনেন্ট। সেদিন জেঠুর বাড়ি বিক্রি করা নিয়ে শ্যামলের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়েছিল। শ্যামল গায়ে হাত তুলতে যাওয়ার সময়ই মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে বন্যা। জ্ঞান ফিরতে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার ওষুধ প্রেসক্রিপশনের সঙ্গে ইউরিন টেস্টও করতে বলেন। পরেরদিন রিপোর্ট পজেটিভ আসে।
কিন্তু দুঃখের কথা, বন্যার জেঠুর সম্পত্তি শ্যামলের হাতে তুলে না দেওয়ায় বাড়ির লোক কেউই খুশি নয়। শাশুড়ি এখন ওকে বাপের বাড়ি যেতে বলছেন।
বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে একেবারেই নেই ওর।
বাড়ি?
কার বাড়ি?
কেন যাবে ও?
কিচ্ছু ভাল্লাগছে না আজকাল। শরীরটাও যেন আর দিচ্ছে না। হাল্কা একটা ঝিমুনি একটু একটু করে গ্রাস করছে ওকে। মাথা থেকে শিরা বেয়ে ঝমঝমিয়ে নামছে বিষণ্নতা। নামছে ভয়...
‘... ওইতো বেশ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে... পোস্ট অফিসের কাকুটাকে। অনেক চিঠিপত্তরের সঙ্গে একটা খাম আলাদা করে হাতে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ওদের বাড়ির সদরের কাছে এসে... আচমকা কাকুর হাত থেকে সেই বড়সড় খামটা কে যেন নিয়ে চলে যায়। লোকটার মুখটা দেখতে পায় না। কিন্তু লোকটাকে পেছন থেকে খুব খুব চেনা লাগে। কোথায়... কোথায় যেন দেখেছে... কিছুতেই মনে করতে পারছে না। ভীষণ... ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বন্যার... একটু পরেই দিনের আলোর মত ঝলমল করে ওঠে চারপাশটা। একেবারে পরিষ্কার... পরিষ্কার মনে পড়ে যায় সওব, সবকিছু। ওই নীল রঙের শার্ট তো ও নিজের হাতেই কাচে। হ্যাঁ... হ্যাঁ... হ্যাঁ ওই লোকটা যে শ্যামল... শ্যামল-ই...’
বুকের ভেতরটা ধড়ফড় করে ওঠে বন্যার। ঘামে চুপচুপে হয়ে গেছে। কখন যে দু’চোখের পাতা এক হয়ে গেছিল। খেয়ালই করেনি। এখন বাজছে তিনটে।
একটু বারান্দায় যেতে পারবে কি? গা’টা গুলোচ্ছে। পারছে না উঠে দাঁড়াতে। হয়ত বমি হবে।
বিশ্রী একটা স্বপ্ন দেখল... দেওয়াল ধরে উঠে দাঁড়িয়েও আবার বসে পড়ে বন্যা।
ওটা স্বপ্ন ছিল? কি করেই বা বলে। তার চাইতে বরং বলতে পারে ওগুলো ওর জীবনের পুড়ে যাওয়া কিছু সত্যি। চোখ বুজলেই যেগুলো ঘুরে ফিরে আসে। আসতেই থাকে।
কিছু পুরোনো স্মৃতি মনে আসে।
কমলিকাদি। ওদের স্কুলের ড্রয়িং দিদিমণি। ওকে অনেকটা জোর করেই আঁকার পরীক্ষায় বসিয়েছিলেন। যে সে আঁকার পরীক্ষা নয়। অনেক বড় বড় স্কুলের ছাত্র ছাত্রী এসেছিল। যদিও পরীক্ষাটা হয়েছিল ওদের স্কুলেই। যা পারে যেমন পারে এঁকে জমাও দিয়েছিল। তারপর কেটে গেছিল চার পাঁচমাস। এর মধ্যেই হটাৎ করে বন্যা টাইফয়েডে পড়ে। স্কুলে কামাই হয় একমাস মত। একদিন কমলিকাদি বাড়িতে ফোন করেন। জানান, খুব তাড়াতাড়ি প্রতিযোগীতার ফলাফল বেরোবে। খবর পাওয়া যাচ্ছে বন্যা সেই ইন্টার স্কুল আঁকা প্রতিযোগিতায় তিনের মধ্যে থাকতে পারে। যেখানে প্রাইজ দেওয়া হবে, সেখানে ও যেতে না পারলেও বাড়ির কাউকে যদি পাঠানো যায়। তবে পুরস্কার সংগ্রহে সুবিধা হবে।
সুবিধা কারুরই হয়নি সেখানে যাওয়ার। না বাবার, না মায়ের, না দাদা বা অন্য কারোর। পড়াশুনার পরীক্ষায় স্ট্যান্ড করলে নাহয় কথা ছিল। এখানে আর কে যায়?
জ্বর, দুর্বলতা মিলেমিশে ভয়ানক কষ্ট বন্যার চারপাশে ঘুরে বেরিয়েছিল সেই দিনটা পর্যন্ত। যতদিন না স্কুলে যেতে পেরেছিল ও।
একমাস পর স্কুলে গিয়ে সংবাদ পেয়েছিল ও সত্যি সত্যি তৃতীয় হয়েছে। কর্তৃপক্ষ থেকে ওর ঠিকানা সংগ্রহ করে নাকি বাড়িতে পুরস্কারও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মনের মধ্যে পাখনা মেলে উঠছিল আনন্দের কবুতর আবার খানিক ঝটপটিয়ে থেমেও যাচ্ছিল তাদের নিরন্তর ওড়ার প্রচেষ্টা। কারণ বন্যা ভাল করেই জানে ওর এই বুক নিংড়ানো ভালোবাসায় বাড়ির কারুর সায় নেই।
হ্যাঁ বন্যা মেয়ে। গোটা পরিবারের মধ্যে একমাত্র বোন বলতে ওই। জেঠার দুই ছেলে, আর নিজের দাদার মধ্যে ও একাই। সবাই যে ওকে ভালোবাসে না তাও নয়... কিন্তু অদ্ভুতভাবে বন্যা দেখেছে ওর মধ্যে আর ওই কাঁচের আলমারিতে সাজানো পুতুলগুলোর মধ্যে যেন কোনও ফারাক-ই নেই। সাজানো পুতুলগুলোকে আদর করা যায়, সাজানো যায়, খুব বেশিদূর হলে লোকের সামনে এনে নিদেনপক্ষে ওদের কেনা দামটাও বলা যায়। কিন্তু.. হটাৎ করে কোনও পুতুল যদি বলে ‘আমি বাড়ির সবার সঙ্গে এক টেবিলে বসে ভাত খাব’... সবাই মেনে নিতে পারবে কি?
বন্যা জানে ওরা কেউ পারবে না। পারার কথাও নয়। সাজগোজ, ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া আর টুকটাক মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করা এর বাইরে বন্যার যে একটা আলাদা ভালবাসা আছে। আলাদা কোনও ভালোলাগা আছে। সেটা কোনওদিন জানতেও চায়নি কেউ। হয়ত অন্য কেউ হলে কষ্টটা হত না। কিন্তু বাবা-মাই যখন বলেছিল, ‘ধুর একটা আধটা কী রং পেন্সিল দেবে... তার জন্য কাকে আর জিজ্ঞেস করব তোর প্রাইজ কোথায়?’
কিন্তু বন্যা জানত, ভাল করেই জানত মানে টাইফয়েডের অসুস্থতার মধ্যেই কোনও একদিন দুপুরবেলা ওর জেঠুদের দরজায় বেল বাজানোর শব্দ শুনেছিল। পোস্ট অফিসের কাকুটা এসেছিল কি? মনে হয়েছিল যেন পোস্ট অফিসের কাকুটাই। গলাটাও ঐরকমই শুনিয়েছিল। জেঠুদের কুকুরটা খুব ডাকছিল। অচেনা লোক দেখলেই ও এমন করেই ডাকে। যে এসেছিল সে যেন কার নাম ধরে ডাকছিল। মিকির ডাকে স্পষ্ট করে শুনতে পায়নি বন্যা। স্কুল থেকে খবরটা শোনার পর বারবার মনে হয় কাকুটা ওর নাম ধরেই সেদিন ডেকেছিল। কে জানে!
সেই থেকে কতবার যে মনে হয়েছে কাকুটাকে দেখতে পেলে একবার অন্ততঃ একবার ডেকে জিজ্ঞেস করবে উনি কি বন্যার জন্যই কিছু এনেছিলেন?
পারেনি। কিছুই বলতে পারেনি বন্যা। আর পারবেই বা কিকরে?
মনের মধ্যে তিরতির করে কেঁপে উঠেছে সেই অস্তিত্বহীনতার ভয়।
সেই যে সেদিন হেমন্তবাবু বন্যার বাবা লেটারবক্সে পরিবারের সবার নাম লিখতে বলেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বন্যার নামটাই লিখতে বলেননি। বন্যা মেয়ে বলে? নাকি পরিবারে ওর অস্তিত্ব ‘শূন্য’ বলে?
লোকে এসব শুনলে বোকা ভাববে। বলবে যে পরিবারের প্রধান তাঁর নাম-ই তো থাকবে বক্সে। তাই যদি হয় তাহলে দাদার নাম থাকবে কেন?
উফঃ সবটা বড় জটিল। বন্যা এসব জানে না। জানতে চায়ও না। শুধু এটা জানে হয়ত বা মানেও জীবনে পাওয়া প্রথম পুরস্কার ও পায়নি। খুঁজে পায়নি নিজের অস্তিত্বকেও।
কে ও?
কি ওর পরিচয়?
শুধুই কি একটা মেয়ে?
যার এক ও একমাত্র পরিচয় ভবিষ্যতে সন্তান উৎপাদন করা।
লেটারবক্সে যাঁর নাম লিখতেও যেখানে পরিবারের হাত কাঁপে। সেখানে একটা অন্য অজানা অচেনা পরিবার তাকে কি সম্মান দেবে?
তবু বন্যা থেমে থাকেনি। অবিরত চেষ্টা করে গেছে। চেষ্টা তো ওকে করতেই হত।
রিতা ফোন করার অনেক আগে থেকেই কাগজ দেখে দেখে স্কুল বা অন্যান্য বিভিন্ন সংস্থায় আবেদন করে গেছে। চিঠি দিয়ে গেছে। যদি কোথাও আঁকার শিক্ষিকা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারে। আর ঠিক সেই কারণেই দিনের পর দিন বারান্দার সেই কোনটায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখান থেকে খুব সহজেই চোখে পড়ে শ্বশুরবাড়ির লেটারবক্সটা।
হ্যাঁ একটা লেটারবক্স। যেখানে কোনওদিন ওর নাম ছিল না। হয়ত কোনওদিন থাকবেও না। কিন্তু ওই লেটারবক্সের গায়ে যে ঠিকানাটা লেখা আছে...।
একটা মেয়ের জীবনে একটা অস্থায়ী ঠিকানা তো বরাবর থাকবে।
সেই পথ চিনেই যদি কোনও চিঠি এসে পড়ে... যেটা কোনওদিন না কোনওদিন কোনও না কোনও মেয়ের জীবনে সত্যিকারের অস্তিত্বের ঠিকানা হয়ে দাঁড়াবে...
শরীরটা ভীষণরকম আনচান করছে...
কে যেন বেল বাজাল?
বন্যা দেওয়াল ধরে একবুক অক্সিজেন নিয়ে উঠে দাঁড়ায়...
রিতার বলা স্কুলটা বিজ্ঞাপনে জানিয়েছিল, একমাসের মধ্যে জানাবে।
বুকের ভেতরটা ঢিপঢিপ করে ওঠে। ঘর ছেড়ে হাফ ল্যান্ডিংয়ের দিকে এগিয়ে যায় বন্যা।
উফঃ কে যেন বাজারের বিক্রি না হওয়া সব্জিগুলো এই অবেলায় বেচতে বেচতে যাচ্ছে। হ্যান্ডমাইকে অসম্ভব জোরে জোরে চিৎকার করছে।
কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছে না বন্যা।
ওর শাশুড়ি যেন কার সঙ্গে কথা বলছে!
কোন পিয়ন কি?
বন্যা এগিয়ে যায়...
(সমাপ্ত)
Comments
Post a Comment