"সম্পর্ক এবং একটি দিবস"
"মাদার্স আর লাইক গ্লু। ইভেন হোয়েন ইউ কান্ট সি দেম, দে আর স্টিল হোল্ডিং দ্য ফ্যামিলি টুগেদার!"
সুশান গ্যালের কোটেশন আর লাস্ট ইয়ারে বার্থডেতে মায়ের
সঙ্গে তোলা ছবিটা ফেসবুকে পোস্ট করে কফি কাপে ঠোঁট ডোবাল পার্থ। তিন-চার
সেকেন্ডের অপেক্ষা শুধু। পটাপট
লাইক, লাভ, ওয়াও সাইন পঞ্চাশ পেরিয়ে যাচ্ছে।
কমেন্ট বক্সে মেসেজ ঢুকছে জোয়ারের গতিতে। আজ
রবিবার, মাদার্স ডে। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ। এইদিনে মাঝে মধ্যে মায়ের সঙ্গে দেখা হয়।
নাহলে মাকে ফোন করে বাকি বন্ধুদের
মত উইশটুকু সেরে নেয়। এবারের তাই করেছে, 'উইশ'।
মা ব্যস্ত। তাতে
নতুন কি আর? একা বেশ কাটিয়ে দেয় একটা স্কার্ফ নিয়ে।
হম্ম একটা স্কার্ফ। ঠিক আজও যেন একটা চেনা গন্ধ ওতে লেগে আছে। খুব ছোটবেলায় মা-র অফিস যাওয়ার সময়, মায়ের গলা থেকে
প্রায় টেনে খুলে নিয়েছিল নিজের কাছে। হয়ত মাকে নিজের কাছে রাখার, পাশে বসার আবেগটুকুই
লুকিয়ে আছে ওতে। সবাই
অবাক হয়েছিল। একজন
গভর্নস বলেছিল, 'ওর মাথার দোষ আছে।'
নাহলে এখনকার দিনে কেউ এমন মা-বাবা মা-বাবা করে?
২০৩০ সালে জন্মেও পার্থ সবার থেকে আলাদা।
জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণ একা একা বড় হওয়াই এখনকার রীতিনীতি।
বাবা-মা শুধু আছেন কাগজে কলমে অভিভাবক
হয়ে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি,
পার্থ এমনটা চায় না। সকাল থেকে সন্ধ্যে মায়ের কোলের
গন্ধ যেন সবসময় ওর অবচেতনের অভাব হয়ে ঘুরে বেড়ায়। মায়ের কি একদিনও ওর জন্য মন কেমন করত না? ওদের ডায়মন্ড হারবারের ফ্ল্যাটের পেল্লায় ঘরগুলোয় পার্থ
থাকত ওর গভর্নসের সঙ্গে।
মানুষ যেন যন্ত্র, যন্ত্রপ্রায়। কলকাতা শহরের ইঁট কাঠ পাথরে কোথাও
প্রাণ নেই। সবাই
ছুটছে, ছুটেই যাচ্ছে। গাড়ি, বাড়ি, অফিস, ঝাঁ চকচকে মার্কেট সবকিছুই এত শার্প অথচ পার্থর
মনে হয় কিছু একটা যেন নেই। একেবারেই
নেই। আর সেই 'না' থাকার ফাঁকাটা বাড়তে বাড়তে কালো একটা
গর্ত হয়ে যাচ্ছে। মিশে
যাচ্ছে গভীর কালোর দেশে। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে ও কি সত্যি
পাগল হয়ে যাচ্ছে? বিনোদ, জুবিলি, অরুণাভ ওরা তো দিব্যি আছে। সিস্টেমে
কারেক্ট পা ফেলে চলছে। কোনোদিন
ওদের কাছে এতটা অভাবের আঁচ শোনেনি। তবে
শুধু ওরই এমন মনে হয় কেন? পার্থর সফ্টওয়্যার ডেভলপমেন্ট অফিসে চাকরি, রাজারহাটে তিন
কামরার ফ্ল্যাট, গাড়ি সব আছে। কিন্তু এসবের ঝলমলে আলোর মাঝেও সেই কালো গর্তটা একটুও
মিলিয়ে যায় না।
দেওয়াল আলমারি থেকে একটা মিহি কমলা রঙের স্কার্ফ
বার করে আনে পার্থ। চোখ
বন্ধ করে নাকে চেপে ধরে বেশ কিছুক্ষণ। বুক ভরে অক্সিজেন নিতে থাকে। সত্যি পার্থ খুব বোকা।
একনাগাড়ে টুংটাং করে মেসেজ ঢুকছে। ফোনটা হাতে তুলতেই দেখে সপ্তর্ষির মেসেজ,
"ইউ আর সো লাকি। হ্যাপি
মাদার্স ডে!"
সপ্তর্ষি ওর ইউনিভার্সিটির বন্ধু।
জন্ম থেকেই জেনেছে বাবা-মা সেপারেট। তাদের মুখটা পর্যন্ত দেখেনি।
কোনো দূর সম্পর্কের আত্মীয় সরকারি সংস্থায় দিয়ে দেয় ওকে।
জীবনে নিজের বলতে কাউকে চেনে না, সপ্তর্ষি।
পার্থ রিপ্লাইয়ে একটা লাভ সাইন দেয়। মনে মনে হাসি পেয়ে যায় ওর। কমবেশি এই দায়িত্ব না নেওয়ার অজুহাত তো সবার মধ্যেই
রয়েছে। এই চব্বিশ বছরে হাতে গোনা ফোনের
গ্যালারিতে কয়েকটা ছবি ছাড়া মনের
অ্যালবামে আর তো কিছুই নেই।
এটাই লাইফ স্টাইল।
এটাই জীবন।
সঙ্গী বলতে বাড়ি থেকে হাঁটা পথে একটা লাইব্রেরীতে যায় পার্থ। বই পড়ার রেওয়াজ তো উঠেই গেছে।
ধুঁকতে থাকা লাইব্রেরীতে খুঁজে দেখতে চায় সেই কথাদের। যাদের অস্তিত্ব এখনও বা হয়ত লুকিয়ে আছে কলকাতা শহরের
অলিতে গলিতে। এমন একটি পরিবার।
যেখানে একসঙ্গে সবাই থাকত বা এখনও থাকে। আদর, অভিমান, ভয়,
রাগ, কান্নার জড়াজড়ি উপভোগ করে মানুষগুলো।
একান্নবর্তী, অণু, তারপর পরমাণুতে ক্রমে ক্রমে ভেঙে গেছে এ শহরের কথা। কিন্তু সেসব পাবে কোথায়? পিছন ফিরে দেখা তো মানুষের স্বভাববিরুদ্ধ।
ইতিহাস হারিয়ে গেছে। পুরোনো
জানতে চায় না এখন আর কেউই।
যেখানে আঙ্গুলের ডগায় গোটা পৃথিবী জানা যায় গুগলে। সেখানে বই কেন? তাই মানুষ নিজের ডিজিটালি আপডেটেই সন্তুষ্ট। পার্থ জানে, কোনও
এক সময়ে ইংল্যান্ড ভারতে এসেছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের ঝোঁকে। আর
সেই থেকেই পাশ্চাত্য প্রেমের আরও এক নমুনা হয়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতা। পেয়েছে দুনিয়াজোড়া কিছু উৎসবের চাকচিক্য।
যাতে মিশে শুধু অসাড়তা। যেমন
আজকের দিনটা। ১৯০৭
সালে ভার্জিনিয়ার গ্রাফিটন শহরে একটি চার্চে 'আনা' এই দিন উৎযাপন করে। যেখানে
তার মা অ্যান জার্ভিস পড়াতেন। আনার
মা বলতেন, মানবতার জন্য তার বিভিন্ন কাজের মত কেউ না কেউ একদিন 'মা' দিনটাকে মেনে চলবে।
আনা প্রতি বছর মায়ের পছন্দের ফুল কারনেশনানকেই (সুগন্ধি ফুল) বেছে নিয়েছিলেন। 'আনা'র অনুরোধ ছিল, এই দিনে সবাই যেন মায়ের সঙ্গে দেখা
করে, অন্ততঃ মাকে একটা চিঠি লেখে। সেই
থেকেই ইউএসএ-তে এই দিনটা সবাই মেনে থাকে।
আবার গ্রীসে প্রতি বসন্তকালে দেবতাদের মা 'রিয়া', যিনি ক্রনাসের সহধর্মিনী তাকে মেনে উৎযাপন করা হয়। রোমানরা
দিনটি মানেন, 'জুনো'কে মনে রেখে। নরওয়ে, লেবানন, সৌদি আরব, মিশরে
আমেরিকানদের মতোই 'মাদারিং সানডে' পালন
হয়। বই পড়া তথ্যগুলোয় সব পেলেও পার্থ পায় না মায়ের সেই
আদুরে গন্ধটা। মায়ের ভালোবাসা কি একটা দিনে, কেবল
একটা দিনই মেখে রাখতে পারে? তার
ওম পেয়েই তো ৯টা মাস পৃথিবীর প্রতিটা মানুষই প্রাণ পেয়েছে। তবে? চোখের কোল অজান্তেই ভিজে ওঠে ওর।
কাঁচের জানলার স্লাইডটা সরিয়ে চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ায়
পার্থ। মে মাসের কড়কড়ে রোদ, হুড়মুড়িয়ে একদলা জ্বালা নিয়ে ঢুকে পড়ে ঘরে।
বুকের মধ্যেও কী এক অসহ্য গরম, দলা পাকিয়ে ওঠে। চোখে পড়ে ওর ফ্ল্যাটের উল্টোদিকে 'গভর্নমেন্ট চাইল্ড
হোস্টেল'টায়। যেখানে বাবা-মা ছেড়ে যাওয়া বাচ্চাগুলো থাকে। বড় হয়, বেঁচে
থাকে ভাবলেশহীন পুতুল মানুষ হয়ে। মনে
পড়ে যায় কতকিছু। বুকের
কষ্টটা একটু একটু করে ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায় বাইরে। পার্থ
আর জানলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। জানলা
বন্ধ করে, ঘরের এসি অন করে। ফোনে আরো শ'খানেক মেসেজ এসে জড়ো হয়েছে। একেক করে পার্থ মেসেজগুলো পড়তে থাকে, রিপ্লাই করতে
থাকে। আর ঠিক তখনই ফোনের স্ক্রিনটা কালো হয়ে যায়।
শিট্! ফোনটা হ্যাং করে গেছে।
পার্থ ফোনটা সুইচড অফ করে দেয়। ফ্রিজ
থেকে ঠান্ডা জলের বোতলটা নিয়ে কয়েক ঢোঁক
গলায় ঢেলে আবার ফোন নিয়ে বসে পড়ে। ফোন
অন করতেই নীল, সবুজ আলো ফুটে উঠে ফোনটা আগের চেহারায়
ফিরে আসে। পার্থ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ফেসবুকে ক্লিক করে, কয়েকটা সাজেশন পেজ ভেসে ওঠে
সামনে। এগুলো মাঝে মাঝেই আসে। আচমকা একটা পেজের কভারে চোখ আটকে যায়।
পেজটার নাম 'মেমোরি'! কি সুন্দর একটা বাচ্চা মেয়ের
আঙুল ছুঁয়ে আছে একটা পরিণত আঙুল। নিশ্চই মা, মেয়ে! আগ্রহবশত পেজটা
দেখতে দেখতেই আরও, আরও কতগুলো এমনই মিষ্টি ছবি চোখে পড়ে। কোনওটায় মেয়েটি মায়ের কোলে, কোনোটা আবার হাঁটতে শেখাচ্ছে
পরিণত হাতটা। এটা
কার প্রোফাইল? এরকম ছবি এখনও কেউ রাখে? বেড়ে
ওঠার প্রতিটা ধাপ এমন যত্ন করে কে রেখেছে?
অবাক লাগে পার্থর। নাহ,
কোথাও লেখা নেই পেজটা কার। এমনকি ফোন নাম্বারও নেই।
পোস্টের ছবিগুলোর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে তারিখ, সময়
থাকে। সেটুকুও নেই। হয়ত
পোস্টদাতা ডিলিট করে দিয়েছেন। কেজানে তাঁর কাছে হয়ত ছবিটা জরুরি।
সময়টা নয়। আরেকটা
ব্যাপার শিশুটির এই বড় হওয়ার ধাপটা যেন হটাৎ করেই আটকে গেছে। কিশোরী বয়স পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছবির ধাপগুলোও
কমে গিয়ে একেবারে শুন্য হয়ে গেছে। বাকি
ছবিগুলো? কৌতূহল যেন কিছুতেই স্বস্তি দেয় না পার্থকে। পেজটা লাস্ট সিন হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। একটা উপায় মাথায় আসে। পার্থ চটপট পেজের মেসেজ বক্সে দু'লাইন লিখে টাইপ করে ফ্যালে।
উত্তরটা এসেছিল ঠিক এক মাস পরে।
পেজটা লাইকের সঙ্গে সঙ্গে পোস্টদাতা কিভাবে এত যত্ন করে ছবিগুলো রেখেছেন। বড় জানতে ইচ্ছে করেছিল। তাই ওনার সঙ্গে পরিচয় করার আগ্রহটাও জানিয়েছিল পার্থ। ছোটবেলার একটা ছোট্ট শরীর, ছোট্ট মনকে যিনি এভাবে ধরে রাখেন।
তিনি নিশ্চই অসম্ভব স্নেহশীল একজন মানুষ। সেই কালো গর্তের মাঝেও খানিক আশা এসে ভিড় করছিল পার্থর
মনের। তাহলে কি এখনো কিছু অনুভূতি আজও
বেঁচে আছে?
ইংরেজি হরফে বাংলা কথা ফুটে উঠেছিল কালো অক্ষরের রিপ্লাইয়ে,
"এতদিন পর কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছে। আশ্চর্য হচ্ছি। আমিও আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাই।
কিন্তু শরীরের জন্য বাড়ির বাইরে বেরোনোর উপায় নেই।
ফোন নাম্বার..."
ফোনে কথা হয়েছিল।
পার্থর যেন তাতেও আশ মিটছিল না। মানুষটাকে সামনাসামনি দেখতে ইচ্ছে
করছিল। বাড়ির ঠিকানা নিয়ে উইকেন্ডেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আলিপুর চেতলা রোডে শ্রীলেখা মুখার্জীর বাড়ি। একতলা বাড়ির মরচে ধরা লোহার গেটটা চারপাশের ফ্ল্যাটের
তুলনায় বেশ বেমানান। তবু
কী বিপুল এক কৌতূহল পার্থকে ডোরবেলের দিকে হাত বাড়াতে বাধ্য করে।
মিনিট খানেক বাদে যিনি এসে দরজা খুলেছিলেন। তাঁর বয়স আন্দাজ আশির কাছাকাছি তো হবে। ভাঙা গাল, ছোট্ট
পাতলা গড়নের শরীরটা শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল। কিন্তু কুঁচকে যাওয়া চামড়ায় চোখদুটোয় কি দীপ্তি। কোথাও অপ্রাপ্তির লেশমাত্র নেই।
মুখোমুখি বসে পার্থ জেনেছিল সবটা।
পরিবার তো কবেই হারিয়ে গেছে। এগিয়ে চলার গাড়ি সন্তানকেও এগিয়ে নিয়ে গেছে। পিছনে পড়ে রয়েছে শুধু স্বামীর করা বাড়ি। আর ফিক্সড ডিপোজিটের কিছু টাকা। অনেকে ফ্ল্যাট করার কথা বলেছিল।
অনেক উৎপাতও সহ্য করতে হয়েছিল। কিন্তু
তাঁর মন সায় দেয়নি। পাড়ার
মেয়ে নলিনী আসে দেখাশোনার জন্য। ওরই
উৎসাহে মোবাইল শেখা। বলেন,
সেযুগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে, পরিবারের
মধ্যে সবচেয়ে লেখাপড়া শিখেছিলেন শ্রীলেখাদেবীই। নলিনী বলেছিল, 'ফেসবুকে' নাকি হারিয়ে যাওয়া মানুষদেরও খুঁজে পাওয়া যায়।
তাই...। একটি মাত্র মেয়ে তাঁর। অক্সফোর্ডে পড়তে পাঠিয়েছিলেন। মেয়ে প্রফেসর হয়েছে। তাই অশিক্ষিত মা-বাবার দুনিয়াটা মুছে ফেলেছে।
স্বামীর এক বন্ধু বলেছিল, মেয়ে নাকি বিয়ে করেছে। গাড়ি, বাড়ি
সব আছে। আছে পুত্রসন্তানও। 'মেমোরি'র ছবিগুলোও তাই মেয়ের পরিণত হবার পর থেকে তাঁর
কাছে নেই। অদ্ভূত এক আবেগ মিশে ছিল বৃদ্ধার
কথায়, আলাপে। মনে
হচ্ছিল আজ অনেকদিন পর সত্যিকারের মা-কে
খুঁজে পেল পার্থ।
আচমকা পার্থর চোখে পড়ে একটা বিষয়।
বৃদ্ধার সঙ্গে থাকা বাচ্চা মেয়েটার ছবিতে....বাচ্চা মেয়েটার চোখের খয়েরি মণিটা... আর... আর ... ডান
ভ্রুর ওপর কাটা দাগটা...। ফোনে
এতটা লক্ষ করেনি। আজ ঘরের দেওয়াল জুড়ে কাছাকাছি
এসে যখন ছবিগুলো দেখছে। নিজের কৌতূহল আর একটুও চেপে
রাখতে পারে না। বুক পেটের মধ্যেটা গুড়গুড় করে
ওঠে। বৃদ্ধার আরও কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস
করে,
'আপনার মেয়ের নামটা...?'
কয়েক সেকেন্ড। ব্যস্ত শহরের মাঝে একটা ঘর যেন
হটাৎ করেই বোবা হয়ে যায়।
পার্থ বৃদ্ধার অশক্ত হাতটাকে শক্ত করে ধরে। মনে হয় সেই কালো গর্তটা একটু একটু করে বুজে আসছে। নাক টেনে একবুক শ্বাস ভরে নেয়। গন্ধটা ঠিক একইরকম। মায়ের মতন।
ওই খয়েরি চোখের মণি ওই ডান দিকের ভ্রূর কাটা দাগটা
যে; এক একমাত্র সহেলি রায়ের। সেটা বৃদ্ধার মুখে নামটা শোনার
আগেই বুঝতে পেরেছিল পার্থ।
ওর মা বাইরে পড়াশুনা করেছে জানত। কিন্তু
পরিবার? নাহ। যে পরিবারকে আতিপাতি করে খুঁজে
চলেছে সেই ছোট্ট থেকে। বাবা বা মায়ের দিকে তার কোনও
নাম ও নিশান জানতে পারিনি। তাহলে কি ও যা ভাবছে তাইই? শ্রীলেখা মিত্র কি
সহেলি রায়ের...? নাকি পার্থ ভুল করছে। গুলিয়ে
ফেলছে সবটা...!
আজ তো মাদার্স ডে নয়, তবে যে মা প্রতিটা দিন তাঁর
সন্তানকে বুক থেকে এতটুকু হারাতে দেননি। তার
কাছে প্রতিটা দিনই মায়ের দিন।
রোদ সরে জানলা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা আসতে শুরু
করে ঘরে। খুব মেঘ করেছে। বৃষ্টি
আসবে কি? পার্থ ভিজবে, খুব ভিজবে। পাশে থাকার হাতটা ওকে যে ভরসা দিচ্ছে।
(সমাপ্ত)
খুব স্পর্শ কাতর ভাল লাগলো
ReplyDeleteভালো লাগলো বেশ।
ReplyDeletethanks
DeleteDidi khub sundar hoyeche.
ReplyDeletethanks
Deleteমন ছুঁয়ে গেল দিভাই ।
ReplyDelete2030 এর পারমানুবিক পরিবারে মা কি সত্যিই অনেক দূরে চলে যাবে গো ? শুধুই কি ফেসবুকের দেওয়াল টা তে একটা ছবি সেটে দিয়েই আমাদের ভালোবাসার প্রমান দেব ? নাকি অলরেডি আমরা সেই সমাজেই বাস করছি ! যেখানে অন্তরের ভালোবাসার চেয়ে ভালোবাসার প্রকাশ টাই বেশি প্রয়োজন !