'আড়াল ও চিঠি-র কথা'
'আড়াল ও চিঠি-র কথা'
ভালবাসা কী কেমন আমি জানি না। জানি
না তাকে চোখে দেখা যায় কিনা। এও অজানা ভালবাসা হটাৎ আস্ত
একটা প্রতীকী হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় কিনা। জানি
না ভালবাসায় আদৌ জেতাহারা হয় কিনা।
যেটুকু ঠেকে শিখেছি, অনুভব করেছি তাতে
ভালবাসার টুকরো স্বাদটুকু যে বড়ই আহ্লাদের, বড়ই মিঠে সে সম্পর্কে আমি
নিশ্চিত।
আমার ভালবাসা 'চিঠি'।
মানে সাদা পাতায় বুকের গলিতে লাবডুব খেয়ে ওঠা
কতগুলো অনর্গল কথা। মোদ্দা
কথা আমার ভালবাসা সাজগোজ করে বেঞ্চি চাপড়ে আঁতলামি
করে না। আবার রকস্টার হয়ে প্রেম কাঁধে নিয়ে বাইকে তুফান
তোলার স্পর্ধাও নেই।
আমি লুকাই। আমি লুকাতে ভালবাসি। আমি জানি, আমি যত বেশি লুকাব আমার
প্রেমসম্পদ ততই আমাতে মেখে থাকবে। আমার গল্পের মুড়ো থেকে ল্যাজা
সবটাই আড়াল। তাই আমি এ গল্পের নাম রেখেছি, 'চিঠি'।
যাকে বুকপকেটে আগলে রাখতে পারি আজীবন;
প্রিয় চিঠি,
আমি তোমাকে নিয়ে একলা। একলা হয়েছি। তার জন্য অবশ্য দোর দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি।
সেসব আগল কবেই খসে পড়েছে। দেখো কেমন তেরছা রোদ এসে পড়েছে
আমার বিছানায়। আমার কোলবালিশের ছায়ায়।
ঠিক ওখানটাতেই তোমার অবাধ আনাগোনা। আমি দেখেছি তুমি বড় আলো ভালোবাসো। যেখানেই সবকিছু ঝকমকিয়ে ওঠে সেখানেই তুমি। ঠিক এখানেই তোমার সাথে আমার ফারাক বিস্তর। তুমি মেলে থাকতে ভালবাসো। আমি
গুটিয়ে। তুমি কথা বলতে ভালবাসো। আমি শুনতে। তোমার
রাগ হলে উদ্দাম সমুদ্রের ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়ো। আমি অভিমান হলে সরে আসি। সরে থাকি। এই
এখন যেমন বাড়িভর্তি লোকের মাঝেও আমি একলা। একলা
আমি তোমাকে নিয়ে।
চিঠি, এমন পুরুষ তোমার পছন্দ তো?
মানে তোমার উচ্ছল ছটফটে শরীর মাঝে ঠিক এইরকম একটা বেসুরো আমেজ এসে পড়লে
হাসতে পারবে তো?
মন খুলে কথা বলতে পারবে তো?
আমি জানি, একসময় না একসময় তোমার এই বেখাপ্পা জীবন হাঁফ ধরিয়ে দেবে।
মনে হবে সব ছিঁড়ে কুটে বেরিয়ে যেতে। আমি
তোমায় আটকাতে পারব না। সত্যি কথা সেভাবে আটকাতে চাইও
না।
জানো আমাদের কলেজের এক প্রফেসর বলেছিলেন এখন বিজ্ঞাপনের যুগ। ভালবাসার বিজ্ঞাপন কি সত্যি সত্যিই লাগে? ওই যে সেদিন দেখলাম
তুমি হেসে হেসে তোমার বান্ধবীদের সঙ্গে ফুচকা খাচ্ছিলে। নীল ওড়না উড়িয়ে বন ময়ূরীর মত হটাৎ বৃষ্টিতে ভিজে
ভিজে কেমন চমৎকার করে রাস্তা পেরিয়ে আসছিলে।
বিশ্বাস করো ইচ্ছে করছিল পাগলের মত ছুটে যাই তোমার
কাছে। হাঁটু গেড়ে বুক ঠুকে বসে পড়ি তোমার দুটো ভেজা
পায়ের পাতার কাছে। ইশ্। সিনেমাটিক এসব ভিউ দিয়ে কি মন জয় করা যায়? কে জানে! শুনেছি তো মেয়েরা এই
উদ্দাম পাগলপন চায়। যে ছুট্টে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে
পারবে, অক্লেশে। আমি
পারব না। আড়াল হব। বরং আড়াল হয়ে খুঁজব তোমাকে ঠিক কোন নামে ডাকব? কোন নামে ডাকলে তুমি
একবার অন্ততঃ সাড়া দিয়ে উঠবে।
জানো চিঠি মাঝে মাঝে ভাবি আমার এই চুপকথারা আর
পাঁচটা মোমশিখার মত হয়ত হারিয়ে যাবে। লাভ
কি এমন পুরুষের? যার সেই অনন্য অসীম শক্তিটুকুই নেই। যে ঝর্ণা ভালবাসে। কিন্তু ঝর্ণার সেই ঝুরো জলের কাছাকাছি এলেই যার
চোখ বুজে আসে।
আড়াল খুঁজছি একথা যেমন ঠিক। তেমন এটাও ঠিক ওই যে তেরছা রোদ কী এক আশ্চর্য
জাদুবলে নিয়ম করে আমার এ বিছানায় আসতে শুরু করেছে। ওকে আমি চিনি। এমনটা আগে হত না জানো। আজ হয়।
ঠিক সেই দিনটা থেকেই কি?
যেদিন আচমকা তুমি আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিলে। ভুল। হয়ত শুনতে চেয়েছিলে।
অটো থেকে নেমে সোজা তাকিয়েছিলে আমার দিকে। সত্যিই কি তাই? না আমার মনের ভুল।
চিঠি তুমি আসবে কি?
হেসে উঠবে কি আমার সমস্ত গোপন ছাপিয়ে?
কথা বলে উঠবে আমার ছায়া পৃথিবীর দেওয়াল জুড়ে?
ছুঁয়ে থাকবে কি একটা রোদ শরীর হয়ে?
ইতি তোমার
আড়াল
কি মনে হচ্ছে বড্ড বেশি ন্যাকামো? বড্ড বেশি রাবীন্দ্রিক। তা
তোমাদের মনে হতেই পারে। ওই যে আড়ালের কথায় ও ছায়া হয়ে
থাকতে ভালবাসে। কিন্তু
তোমরা বিশ্বাস না করলেও এই চিঠিটুকুও যেমন সত্যি। সত্যি
আড়ালের প্রতিটা অনুভব। আড়াল তোমাদের মত মানানসই নয়।
তাও কিকরে যেন তুমুল বর্ষার মত ওর এই পাংশুটে রোজনামচায় চিঠি এসেছিল।
একটু একটু করে আড়ালের মনভিতে সকলের অজান্তেই কখন যেন নিজের জায়গা করে
নিয়েছিল চিঠি। কেউ টেরটাও পায়নি।
আজ যখন লকডাউনে যে যার চার দেওয়ালে খুশি খুঁজছে
আমারও ইচ্ছে হল আড়ালকে আরেকবার খুঁজি। খুঁজে দেখি ওর চিঠিকেও।
যদিও জানি সে পাতা আজ আর গোলাপি নেই। রংটা অন্যরকম হয়ে গেছে। তবু
আড়াল চিঠির গল্পটা আরেকটু বেশি। আরেকটু বড়।
আরেকটু হাসি কান্না মান অভিমান মেখে। সেসবের গল্প না-হয় পরে একদিন হবে।
যেদিন তোমরা চাইবে।
আজ এই রবীন্দ্র সকালে যারা এখনও মন গুছিয়ে উঠতে
পারোনি। যারা এখনও আগল খুলে অপেক্ষায়
সেই রোদের কণার, যারা এখনও আড়াল খুঁজে চলেছ নিজেদের মত করে।
আড়ালের প্রথম চিঠি তাঁদেরই জন্য...
আড়ালের মত আমিও অপেক্ষায় থাকব চিঠি-র উত্তরের।
গল্পটি শুনতে চাইলে নিচের link এ click করুন
Comments
Post a Comment